HNExpress নিজস্ব প্রতিনিধি : সামনের ২৪শে মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষ্যে , মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান বেসরকারি হসপিটাল চেন, ২১শে মার্চ বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজন করেছিল একটু প্রেস কনফারেন্সের। টিউবারকুলোসিস (যক্ষ্মা) ভারতের জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা সার্বিক ভাবে যক্ষ্মার কেস এবং মৃত্যুহারের দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বের সর্বমোট যক্ষ্মা কেসের মধ্যে ২৮% রয়েছে ভারতের। এই অনুষ্ঠান আয়োজন করার লক্ষ্য ছিল মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, যার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর ক্ষেত্রে ” হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মাকে শেষ করব” স্লোগান মেনে চলা হয়েছে। ডঃ দেবরাজ জস, ডিরেক্টর, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল যক্ষ্মা নিয়ে বিভিন্ন জরুরি তথ্য পরিবেশন করেন এবং তার যথাযথ ব্যাখ্যা দেন এবং সঙ্গে ছিলেন ডাঃ সৌমিত্র ভরদ্বাজ, গ্রুপ চিফ মার্কেটিং অফিসার,মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল । এছাড়া যক্ষ্মার ক্ষেত্রে দ্রুত রোগের ধরা পড়া, তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা এবং রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন মিথ নিয়ে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।
যক্ষ্মা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বর্তমানে কার্যক্রম চলছে যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মা মুক্ত করা যায়। ২০২২ সালে ২২.৪ লাখ যক্ষ্মার কেস থেকে ২০২৩ সালে ২২.৩ যক্ষ্মা কেস – সংখ্যায় কিছুটা কমলেও এই ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেকটাই জায়গা রয়েছে। আক্রান্তদের অনেকেই এখনো নিক্ষয় পোষণ যোজনায় নিজেদের রেজিষ্টার করেননি। বলাই বাহুল্য, এই প্রকল্পে রেজিষ্টার করলে আর্থিক সাহায্য করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে, যার সুযোগ রেজিষ্টার না করলে সম্ভব নয়। যক্ষ্মার কেস সরকারি হেলথ সেন্টার তথা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রিপোর্ট করা খুব দরকার। তাহলেই সঠিক ভাবে এই রোগ সম্পর্কে স্পষ্ট খোঁজ খবর এবং জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। এর ফলে বৃহত্তর ক্ষেত্রে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবেন এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভবপর হবে।
২০২২ সালে, যক্ষ্মার ক্ষেত্রে অনেকগুলো কেস ধরা পড়ে। প্রাইভেট সেক্টরের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল ৭,৩৩,৬৯৪, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৭.১। ২০২৩ সালেও এই ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে যেখানে প্রাইভেট সেক্টর আরো বেশি কেস রিপোর্ট করেছে, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৮,৩৮,১১৬, যা লক্ষ্যমাত্রার ৮৯%।
মেডিক্যাল প্রযুক্তি যক্ষ্মার ক্ষেত্রে ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এনেছে। ডায়াগনস্টিক দিক থেকে ব্রণকোস্কপি এবং বায়োপসি অনেক পরিবর্তন এনেছে, বিশেষ করে লিম্ব নোড এর মত কেসে, যার ফলে সময়মত ইতিবাচক ফলাফল সম্ভব হয়। এছাড়া অনেকের ক্ষেত্রেই এটি কার্যকরী হয়ে থাকে। সাধারণত যক্ষ্মার চিকিৎসা ওষুধ-সংবেদনশীল এবং ওষুধ-প্রতিরোধী, দুটো স্ট্রেনকেই দেখে এগোয়। বর্তমানে ল্যাবরেটরির সামর্থ্য উন্নত হওয়ায় এবং প্রযুক্তিগত ভাবে অনেকটা এগোনোর ফলে আগের মত ফল জানার জন্য আর ৪০ দিন অপেক্ষা করতে হয় না, ২-৩ দিনেই জানা যায়। এর ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয় না। ওষুধ-প্রতিরোধী স্ট্রেনের ক্ষেত্রে যক্ষ্মার চিকিৎসায় উন্নতি চোখে পড়ার মতো। নতুন যে ওষুধ বেরিয়েছে, বেডাকুইলিন এবং ডেলামানিড, এগুলো সামগ্রিক চিকিৎসা ২৪ মাসের (দুই বছর) থেকে ৯ মাসে কমিয়ে এনেছে। এগুলো খুব সফল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ওষুধ মুখ দিয়ে খাওয়া যায়, এবং এর ফলে চিকিৎসা অনেকের জন্য সুবিধা হয়েছে।
যক্ষ্মা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ডঃ দেবরাজ জস বলেন,” যক্ষ্মা কোন অর্থনীতিক বাধা পরিসীমা মানে না। এত যে কোন মানুষের হতে পারে। প্রখর নজরদারি এবং সরকারি সংস্থা বা সেন্টারে জানানো খুব শক্তিশালী দুটি অস্ত্র যেগুলো এই রোগের সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয়। এর ফলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত এগোনো সম্ভবপর হয়ে ওঠে। ব্রণকোস্কোপি, স্পটাম স্মিয়ার মাইক্রোস্কোপি, বায়োপসির অত্যাধুনিক ব্যবস্থার ফলে কোন রোগীর ক্ষেত্রে যক্ষ্মা ধরা পড়া আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা মুক্ত ভারত পেতে গেলে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য সচেতন করতে হবে। এছাড়া যক্ষ্মা ধরা পড়ার পর রোগীরা যেন দ্রুততার সাথে ডাক্তার দেখান। মনে রাখতে হবে যে যক্ষ্মা হওয়া মানেই মৃত্যু নিয়ে, বরং সেরে ওঠেন প্রচুর মানুষ।” প্যানডেমিকের পর ২০২২ সালে ভারত সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিরাময় প্রোগ্রাম (ন্যাশানাল টিবি এলিমিনেশন প্রোগ্রাম – এনটিইপি) বেশ দ্রুত গতিতে।কাজ করে চলেছে, যা যক্ষ্মাকে শেষ করবে ২০২৫ সালে।
অয়নাভ দেবগুপ্ত, জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, বলেন,” যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল দায়বদ্ধ রয়েছে সব সময়। এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে যাতে চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর সাথে সাথে আরো বেশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব হয় এবং পার্টনারশিপ তৈরি করা যাতে যক্ষ্মা মুক্ত ভারত বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়। যক্ষ্মা নিয়ে মেডিকা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে চলেছে এবং করতে থাকবে, যাতে মানুষ আরো সচেতন হয়ে ওঠেন এবং কোন উপসর্গ দেখা গেলেই ডাক্তারকে জানান।”